সুজিত রায় ও মধুকল্পিতা চৌধুরী দাস :-
২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনেই আপাতত পাখির চোখ দেশবাসীর। মোদি সরকার কি আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে? নাকি এবারে তৃতীয় ফ্রণ্ট ক্ষমতায় উঠে আসবে? এই নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই।
একদিকে যেমন জিএসটি ও নোট বাতিল নিয়ে সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। ঠিক তেমনই মোদি সরকারের জামানায় দু-দুটো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বিজেপিকে অনেকটাই অক্সিজেন যোগাবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। আবার বিরোধীদের একাংশের দাবি, জিএসটি-নোটবাতিলের ফলে কোণঠাসা বিজেপি সরকার। তাই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-কে হাতিয়ার করেই নাকি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মানুষের মন জয় করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর জামানায় দুটো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুধুমাত্রই ভোট বাড়ানো জন্য বলে মত বিরোধীদের।
তবে, বিরোধীদের এ দাবি একেবারেই ঠিক নয়। বিশিষ্ট সাংবাদিক সুজিত রায়ের দাবি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা যুদ্ধ হলেই যে রাজনৈতিক দলগুলো ফায়দা পায় না। এর বেশ কিছু তথ্য প্রমাণও রয়েছে।
সময়টা ১৯৬২-এর নির্বাচন। ৩৬১টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল জহরলাল নেহেরুর কংগ্রেস সরকার। এরপর ১৯৬৪ সালে জহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর পদে এলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এই কংগ্রেস সরকারের আমলেই ১৯৬৫-তে দেশবাসী দেখল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
যদি ‘যুদ্ধ’ বা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-ই ভোট ব্যাঙ্কের তুরুপের তাস হতো, তাহলে যুদ্ধ পরবর্তী নির্বাচন অর্থ্যাৎ ১৯৬৭এর নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন কমে কেন ২৮৩ হয়ে গেল? প্রায় ৪ শতাংশ ভোট কেন কম পেল কংগ্রেস?
এবারে ফিরে দেখা যাক ১৯৯৮ এর নির্বাচন। বিজেপির ঝুলিতে ১৮২টি আসন। যদিও সে সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপরই অর্থ্যাৎ ১৯৯৯-এ ৩রা মে থেকে ২৬শে জুলাই দেশের মানুষ সাক্ষী থাকল ‘কার্গিল যুদ্ধের’। সে বছরই ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত দেশে নির্বাচন হল। হিসেব মতো এই নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ। কিন্তু সে বছরের নির্বাচনেও বিজেপির আসন সংখ্যা থেমে থাকল সেই ১৮২টাতেই। এখানেই শেষ নয় উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেখানে ১৯৯৮এ বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ৫৭, ১৯৯৯এর নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ালো ২৯! কর্ণাটকেও ৬টা আসন কম পেল বিজেপি। অপরদিকে পাঞ্জাবে ভোট কমল ২.৫ শতাংশ।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা ‘যুদ্ধ’-ই ভোটের তুরুপের তাস নয়। একথা আমি আপনি নয়, একথা বলছে ইতিহাস। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকার আবারও যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তার ওপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর কোনও প্রভাব থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।