মধুকল্পিতা চৌধুরী দাস :
সিনেপ্রেমিকরা হারালো তাঁদের আরও একটি প্রিয় ঠিকানা। উত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতা, সিনে প্রেমিকদের কাছে ভীষণ পরিচিত নাম ছিল ‘মিত্রা সিনেমা হল’। সিঙ্গল স্ক্রিনের এই সিনেমা হল ঝা চকচকে সিলভার স্ক্রিনের কাছে হেরে গেলেও সিনেমাপ্রেমীদের মনের মধ্যে থেকে যাবে সারা জীবন।
১৯৩১ সালে এই সিনেমা হলের জন্ম। প্রথমে অবশ্য ‘চিত্রা সিনেমা হল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি পায়। পরে ১৯৬৩ সালে এই সিনেমা হল কিনে নেন জমিদার হেমন্ত কৃষ্ণ মিত্র। তারপর থেকে ‘মিত্রা সিনেমা হল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি পায় এই হল।
মাল্টিপ্লেক্সের রমরমায় ফিকে হয়ে গিয়েছে সিঙ্গল স্ক্রিন। চাহিদা কমে যাওয়ায় খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্ণধারেরা। সেই কারণেই ঐতিহ্যবাহী এই সিনেমা হলের ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হন বলে জানান হলের বর্তমান কর্ণধার দীপেন্দ্র মিত্র।
একটা সময় ছিল, যখন হাতিবাগানের অন্যতম লোকেশন হিসেবে ধরা হতো ‘মিত্রা সিনেমা হল’-কে। সে অনেক বছর আগের কথা, মানুষের হাতে হাতে ছিল না ফোন। চিঠি বা ল্যান্ডফোনের ভরসাতেই দিব্যি কাটত জীবন। ফোনে বা চিঠিতে কারও সঙ্গে দেখা করার কথা বললে ল্যান্ডমার্ক দিয়ে দেওয়া হতো। উত্তর কলকাতার এই অঞ্চলে ‘মিত্রা সিনেমা হল’-কেই ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরে নেওয়া হতো।
তবে, বর্তমানে সিঙ্গল স্ক্রিনের ব্যবসা আর চলছে না। মানুষের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে ঝাঁ চকচকে সিলভার স্ক্রিন। এসির হাওয়ার সঙ্গে হাতে পপকর্ন নিয়েই সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাঁরা। যার ফল স্বরূপ আরও একটা সিনেমা হলের যবানিকার ইতি পড়ল।
সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকের সিনেমা একসময় এই হলেই প্রদর্শিত হতো। এখন সে সবই ইতিহাসের পাতায়। তবে, ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলের বন্ধ এর আগেও দেখেছেন তিলোত্তমোবাসী। মেট্রো, এলিট, মালঞ্চ, রূপবানীর মতো সিনেমা হলের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই স্থানে জায়গা পেয়েছে ঝাকঝকে শপিং মল।
সিনেমা হল বন্ধ হলেও মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। বাবার হাত ধরে কারও প্রথম সিনেমা দেখার স্মৃতি, তো কারও প্রেমের সূচনা, সব কিছুরই সাক্ষী ‘মিত্রা সিনেমা হল’। তাই আজও ‘মিত্রা সিনেমা হল’-কে সযত্নে স্মৃতির পাতায় রেখে দিয়েছেন ভক্তেরা। চিরকালই সেখানে থাকবে। আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শুনবে এই সিনেমা হলের গল্প। তাঁদের কাছে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে ‘মিত্রা সিনেমা হল’।