মধুকল্পিতা চৌধুরী দাস :

২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনে পাখির চোখ দেশবাসীর। নরেন্দ্র মোদি কি আবারও রাজপাটে বসবেন নাকি এবারে রাজপাটে বসবেন অন্য কেউ? এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। সকাল-বিকেল এই বিষয় নিয়েই তর্ক জমে উঠছে চায়ের দোকানে। আর এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে সব থেকে বড়ো তর্কের বিষয় ‘তারকা প্রার্থী’! রাজনীতিতে আদেও কি তারকা প্রার্থী কাম্য? এবিষয় নিয়ে একেক জনের একেক মত!
‘তারকারা’ প্রত্যেকেই তাঁদের নিজেদের পেশায় প্রতিষ্ঠিত, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু এই তারকারাই রাজনীতির ময়দানে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে!
এরাজ্যে এবারে আমরা পেয়েছি বেশ কিছু নতুন ‘তারকা প্রার্থী’। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় উঠে এসেছে দুজন নতুন তারকা প্রার্থী। যাদবপুর থেকে মিমি চক্রবর্তী ও বাসিরহাট থেকে নুসরত জাহান। মিমি ও নুসরত দুজনেই নিজেদের পেশায় একেবারে সফল। এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তবে, মিমি বা নুসরত ভোটে জয়ী হলে তাঁরা কতটা সফল হবেন তা তো ভবিষ্যৎই বলবে!
পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে মিমি বা নুসরত, নতুন হলেও ‘তারকা প্রার্থীর’ রাজনীতিতে আসা নতুন নয়। এর আগেও আমরা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে পেয়েছি। যারা রাজীনিতে শুধু অংশই নেননি, জয়ী হয়েছেন। অনিল চট্টোপাধ্যায় বা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে রাজনীতি কখনোই ‘সখের’ ছিল না। রাজনীতির টানেই তাঁরা এই ময়দানে নেমে ছিলেন। ইতিহাস কিন্তু একথাই বলে আসছে।
২০১৪ এর পর থেকে চিত্রটা একটু অন্যরকম। ২০১৪-এর পর পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যে যে সমস্ত ‘তারকা প্রার্থী’ উঠে আসছেন তাঁরা শুধুমাত্র ‘গ্ল্যামারকে’ কজে লাগাতেই রাজনীতিতে এসেছেন। এটা কোনও মুখের কথা নয়, সংসদে তারকাদের উপস্থিতি ও তর্কে অংশ নেওয়ার তথ্যই তা প্রমাণ করে দেয়।
২০১৪ সালের পর পশ্চিমবঙ্গবাসী বেশ কিছু ‘তারকা প্রার্থী’-কে রাজনীতিতে নামতে দেখেন। দেব, শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়ের মতো তারকাদের রাজনীতিতে প্রবেশ দেখি আমরা। সাংবাদিক সুজিত রায় এদিন ভারতীয় সংসদ তথ্যাগারের তথ্যের ভিত্তিতে জানান, ‘৫ বছরে চিত্র তারকা দেব সংসদে হাজিরা দেন মাত্র ১১ শতাংশ। প্রশ্ন করেছেন ৩টি। মাত্র দুটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। সংসদে ৭৪ শতাংশ হাজিরা দিয়েছেন শতাব্দী রায়। মাত্র ২টি প্রশ্ন করেছেন তিনি। আর ৪টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন।’ এছাড়াও মুনমুন সেন ও সন্ধ্যা রায়ের সংসদে উপস্থিত ও প্রশ্ন করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৬৯ শতাংশ সংসদে হাজিরা দিয়েছেন মুনমুন সেন। একটি প্রশ্নও করেননি, মাত্র ১টি বিতর্কে অংশ নেন তিনি। ৫৩ শতাংশ সংসদে হাজিরা দিয়ে সন্ধ্যা রায় বিতর্কে অংশ নিয়েছেন ৩ বার। আর একটাও প্রশ্ন করেননি তিনি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজ মৈত্র বলেন, ‘‘রাজনীতি কোনও পার্টটাইম কাজ নয়। এটা ফুলটাইম কাজ হিসেবে ধরে নিতে হবে।’’ অর্থ্যাৎ কোনও তারকা যদি মন থেকে চান যে রাজনীতিতে তিনি পুরো সময় দেবেন তবেই তাঁর এই ময়দানে নামা উচিৎ।’’
রাজনীতি-সংসদ এই শব্দগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিৎ প্রতিটি প্রার্থীর কাছে। রাজনীতি-সংসদ এই শব্দগুলোকে ‘গ্ল্যামার জগতের’ সঙ্গে মিলিয়ে দিলে তার ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকেই। অন্তত্য এই কথাগুলো প্রতিটি ‘তারকা প্রার্থীর’ মাথায় রেখেই রাজনীতিতে নামা উচিৎ।