নিজস্ব সংবাদদাতা: বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ এর মূল কেন্দ্র বা বলা যেতে পারে সকল রাজনৈতিক দলের পাখির চোখ ছিল নন্দীগ্রাম কেন্দ্র। যেখানে রাজনীতি অধ্যায়ের এক অমূল পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। আবার অনেকে মনে মনে আশা রেখেছিলেন যে যদি পরিবর্তন কিছু হয়, তাহলে মন্দ হয় না।
সেই নন্দীগ্রাম ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পরও আজও রঙিন। সেই জায়গাকে ঘিরে আজও চলছে রঙিন রাজনীতি!
নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার এস এন রায় স্কুলের বুথের ভোটকে কেন্দ্র করে গরমিল হয়েছে! বুধবার এমনই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ফের একবার শিরোনামে উঠে এল নন্দীগ্রাম। খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এই খবরের বিরোধিতায় সরব হলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এই খবর ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। একুশের মহাসংগ্রামে নন্দীগ্রামই ছিল এক্স ফ্যাক্টর। একদিকে ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে তাঁরই এক সময়ের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। লড়াইয়ের শুরুতেই মমতাকে আট লাখ ভোটে হারানোর হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। গোটা দেশের নজর ছিল সেই লড়াইয়ের দিকে। ভোটের দিন যে লড়াই হয়নি তাও না। দুপুর গড়াতেই ঐ কেন্দ্রে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেড় ঘন্টা ঘিরে রাখেন বিজেপির কর্মীসমর্থকেরা। হুইল চেয়ারে ঠাঁই বসে শান্তিপূর্ণ ভাবে শোনেন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। তারপর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশেই তাকে ঘেরাও মুক্ত করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
২ মে ফল ঘোষণার দিন সকাল থেকে ছিল সেই কেন্দ্রকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা। শুরুতে এগিয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী। তবে সন্ধ্যে যত গড়ায় উত্তেজনার পারদ যেন ততোই চড়তে থাকে। কখনও গণনায় এগিয়ে যান শুভেন্দু তো কখনও এগিয়ে যান তৃণমূল সুপ্রিমো। এরপর সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, নন্দীগ্রামে ১২০০ ভোটে জিতে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করেন, মমতাকে ১৯৫৬ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপরই ভোট গণনায় গরমিলের অভিযোগে সরব হন খোদ তৃণমূল নেত্রী।
বুধবার সেই খবর ঘিরেই ফের একবার সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। রেয়াপাড়ার এস এন রায় স্কুলের বুথের ‘অ্যাকাউন্ট অব ভোটস রেকর্ডেড’। সেই নথিতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, ভোটার সংখ্যা ৬৭৬, ভোটদান ৭৯৯। সংখ্যাতত্ত্বের এমন উলট-পুরাণ চোখ এড়িয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারের। ফর্ম ১৭ সি-তে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন তিনি।
আর এই নথিকেই ভুল বলছেন শুভেন্দু অধিকারী৷ টুইটে তাঁর পাল্টা দাবি, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ বরং রেয়াপাড়ার এস এন রায় স্কুলের বুথের ভোটার ৭৯৯ এবং ভোট পড়েছে ৬৭৬টি৷ যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূল৷ ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামের রায়ের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতোকিছুর পরেও নন্দীগ্রাম নির্বাচন যে এক ‘রহস্যময় কেন্দ্রস্থল’ হয়ে রইল তা বলায় যায়।