Rajib Ghosh– রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি একের পর এক নতুন ঘোষণা করে চলেছে। ইতিমধ্যে রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে রাস্তা, সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে বহু সামাজিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। যা নিয়ে বিজেপিসহ বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বিরোধিতা করতে শুরু করেছে। তাদের বক্তব্য, যে পরিমাণে বাজেটে প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে সেই অর্থে রাজ্যের আয় নেই। আয়ের ক্ষেত্র ঠিক না করে তৃণমূল নেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন বলে তাদের অভিযোগ।যেটা বাস্তবসম্মত নয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়মিত রাজ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা রাজ্যে এসে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করছেন। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সফরে এসেছেন। তিনি পরিবর্তন যাত্রার সূচনা করবেন। নামখানায় বিজেপির জনসভা থেকে অমিত শাহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে সপ্তম বেতন কমিশন গঠন করা হবে। আর বাংলায় রাজ্য সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য 33 শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা থেকে শুরু করে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। রাজ্যের যুবক-যুবতীদের মধ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। রাজ্য সরকারের স্থায়ী চাকরির সুযোগ কমেছে। বিজেপি সহ বিরোধীরা বারবার সেই অভিযোগ করেছেন। স্থায়ী চাকরি কমিয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করছে। সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এরকম একটা সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সভা থেকে এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়ার কারণে আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং স্বনির্ভর হওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। তাদের মধ্যে রাজ্যের মোট ভোটারদের মধ্যে পুরুষ এবং মহিলা ভোটারদের সংখ্যা প্রায় সমান। সেক্ষেত্রে মহিলা ভোটারদের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। রাজ্যে মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেরকম ভাবে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন। সকলের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে মহিলাদের প্রধান হিসেবে তাদের নামে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। সেই ভাবে দেশের অন্যান্য রাজ্যে মহিলাদের জন্য বেশকিছু প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলায় ভোটার তালিকার মধ্যে 49 শতাংশ মহিলা ভোটার রয়েছেন। ফলে কোনো রাজনৈতিক দল যদি মহিলা ভোটারদের অধিকাংশকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে পারে তাহলে তাদের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবে। মহিলাদের ভোটব্যাঙ্কের উপর নির্ভর করে নির্বাচনে জয়লাভের উদাহরণ রয়েছে। এক্ষেত্রে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কথা বলা যেতে পারে। ওড়িশার মহিলা ভোটারদের অধিকাংশ নবীন পট্টনায়ক ও তার দলের প্রতি সমর্থন রয়েছে। তাই নির্বাচনে জয়লাভ করে তার দল। ফলে মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়ন জরুরী। যদিও এদিনের অমিত শাহের ঘোষণার পর নির্বাচনের পরিস্থিতিতে কেউ সেইভাবে বিরোধিতা করেনি। মহিলাদের জন্য চাকরিতে 33 শতাংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে বিজেপির আশা, অমিত শাহের এই প্রতিশ্রুতি কে তারা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবেন। ফলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির এই প্রস্তাব যদি মহিলারা গ্রহণ করেন এবং সমর্থন করেন সেক্ষেত্রে নবান্ন দখলের লড়াইয়ে বিজেপি একধাপ এগিয়ে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।