রাজীব ঘোষ– দালালি বন্ধ করুন আইসি সাহেব। আপনাকে কিছু বললেই আপনি শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ। রীতিমতো আঙ্গুল উঁচিয়ে কাঁথি থানার আইসি কে হুমকির সুরে বলেন রামনগর এর বিধায়ক অখিল গিরির ছেলে এবং যুব তৃনমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। কাঁথি থানায় গিয়ে পুলিশ অফিসার দের উদ্দেশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, যুব তৃনমূলের জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি আইসির উদ্দেশ্যে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে থাকেন। প্রসঙ্গত, থানায় গিয়ে পুলিশ আধিকারিক দের উদ্দেশ্যে ধমকানো পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। এর আগে উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে তৃণমূল নেত্রীর সোনালী গুহ দক্ষিণ 24 পরগনার নোদাখালি থানায় গিয়ে পুলিশ অফিসার দের উদ্দেশ্যে অশালীন ভাষায় হুমকি দিয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল সিপিএমের পরিচালনায় বাম জমানার ঘটনা। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর অত্যাচার আক্রমণ সংঘটিত হলে শাসকদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেওয়া হয় না বলে রাজনীতিতে অভিযোগ উঠেছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা নেত্রীরা থানায় গিয়ে আধিকারিকদের অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য ঘটনা। সুপ্রকাশ গিরি যুব তৃনমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি। শুধু তাই নয়, তিনি রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরির পুত্র। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই জেলা রাজনীতিতে তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হতে থাকে। নন্দীগ্রামের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেছেন, আগে তোমরা সুপ্রকাশ গিরির সঙ্গে লড়াই করো, তারপর অন্য কথা। ফলে এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এই মুহূর্তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক স্তরে সমস্ত কিছু পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার ন‍্যস্ত করা হয়েছে সুপ্রকাশ গিরি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপর। যারা একসময় শুভেন্দু অধিকারীদের বিরোধী হিসেবে জেলা রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন। ফলে শাসক দলের একজন সাংগঠনিক জেলা স্তরের নেতা থানায় গিয়ে আইসি পদমর্যাদার আধিকারিক কে হুমকি দেওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় আইসি বলেন, ঘটনাটায় খারাপ লাগছে। তৎক্ষণাৎ বিধায়ক পুত্র সুপ্রকাশ গিরি বলেন, বাজে কথা। আপনার যেমন বাজে লাগছে বলেছেন তেমনি আমাদের ফ্ল‍্যাগ ফেস্টুন ছিড়ে দেওয়া হচ্ছে। তার থেকে অনেক বেশি বাজে আমাদের লাগছে। বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারী যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় হামলার অভিযোগ করা হচ্ছে। বিজেপির পক্ষ থেকে কলকাতায় র‍্যালিতে শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ সহ বিজেপি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সেই মিছিলে ইট বৃষ্টি করে আক্রমণ করা হয় বলে বিজেপির অভিযোগ। যারা সেই আক্রমণ করেছিল তাদের হাতে তৃণমূলের পতাকা ছিল বলে রাজ্য বিজেপির নেতারা জানান। তবে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারী কাঁথির পুলিশ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন। তার কথায়, ভাইপো এখানে সপ্তাহে সপ্তাহে আইসি বদল করছে। কিন্তু এসবে কোনো লাভ নেই। আদর্শ আচরণ বিধি চালু হলে তখনই বুঝতে পারবেন। এক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসতে পারে যেহেতু শুভেন্দু অধিকারী শাসক তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। ফলে বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় রাজ্য সরকারের পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সরব হতে পারেন। কিন্তু যখন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা থানায় গিয়ে আইসির উদ্দেশ্যে হুমকি দিতে থাকেন, তখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের কথা শুনছে না? তবে কি রাজ্যে পালাবদল হতে পারে বিধানসভা নির্বাচনে? দলীয় সংগঠন কে নির্বাচনে লড়াই করার জন্য শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেছেন। সেই সময়ে যুব তৃণমূল নেতার পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে এই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।